ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: ৩০/০৮/২০২৪ ৮:১৮ পিএম

মাদায়েন শহরটি ছিল পারস্যে। এক সময় বহু মানুষের বসবাস ছিল এ শহরে; যারা খুব খারাপ ও অত্যাচারী ছিল। তাদের প্রধান অপরাধ ছিল ওজনে কম দেয়া। তারা জিনিসের পুরা মূল্য আদায় করতো; কিন্তু ওজনে কম দিতো। তাছাড়া মাদায়েন জাতির আরো বহু অপরাধ ছিল। তারা জাল নোট তৈরি করে সমস্যা সৃষ্টি করতো।

চুরি, ডাকাতি ও লুটপাট করতো এবং দেবদেবী ও মুক্তির পূজা করতো তারা। এ জাতিকে হেদায়েত করার জন্য আল্লাহ তাআলা একজন নবী পাঠিয়েছেন, তিনি হজরত শোয়ায়েব (আ.)। তিনি হজরত হুদ (আ.)-এর বংশধর। আবার কেউ বলেছেন, হজরত ইব্রাহীম খলীলুল্লাহ (আ.)-এর পুত্র মাদায়েনের বংশধর।

হজরত শোয়ায়েব (আ.)-এর ভাষা ছিল খুব সুন্দর; বহু ভাষায় তিনি কথা বলতেন। তার কণ্ঠ ছিল উচ্চ আওয়াজ’ তিনি বিশ্বের সেরা বক্তা ছিলেন। নবী হজরত শোয়াইব (আ.) নানাকাজে অপরাধী ও অত্যাচারী মাদায়েন জাতির কাছে আল্লাহর ধর্ম প্রচার করতে থাকেন এবং তাদের অনেক উপদেশ দিতে থাকেন।

নবী হজরত শোয়ায়েব (আ.) তাদের বিভিন্ন অপরাধ দেখলেন। তখন মাদায়েন জাতিকে নবী শোয়ায়েব (আ.) বললেন, তোমরা জিনিসের যে পরিমাণ মূল্য আদায় কর সেই পরিমাণ জিনিস দিবে। তোমরা যদি ওজনে কম দাও তাহলে তোমাদের ওপর আল্লাহর গজব আসবে। এই উপদেশ শুনে কিছু লোক আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছেন। আর বাকি যারা ঈমান আনেননি, তারা পথভ্রষ্ট ও খারাপ পথে রয়েছেন।

মহাগ্রন্থ আল কোরআনে এসেছে, তোমরা মাপে পূর্ণ মাত্রায় দিবে; যারা মাপে কমতি করে তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না। এবং তোমরা ওজন করবে সঠিক দাঁড়িপাল্লায়। লোকদেরকে তাদের প্রাপ্য বস্তু কম দিবেনা এবং পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করে ফির না। তোমরা ভয় কর তাকে, যিনি তোমাদেরকে এবং তোমাদের পূর্বে যারা গত হয়েছে তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। (সূরা আশ শুআরা, আয়াত ১৮১-১৮৪)

নবী হজরত শোয়ায়েব (আ.) এর উপদেশ তারা কোন ভাবে শুনতে চায় না ও মানতে চায় না, তারা বলেন হে শোয়ায়েব তোমার কথা কেন আমরা শুনবো তুমি আমাদের রাজা বাদশা নাকি। তখন অবাধ্য মাদায়েন জাতিকে নবী হয়রত শোয়ায়েব (আ.) বলেন, নূহ (আ.) এর জাতি, কওমে লুত, আদ জাদি ও সামুদ জাতির ঘটনাগুলো তোমরা স্মরণ কর। অন্যায় অপরাধ করার কারণে আল্লাহ তাদের কে ভয়াবহ গজব দিয়ে ধ্বংস করে দিয়েছিল। তোমরা যত অন্যায় অপরাধ করেছো এখন ও সময় আছে তোমরা তওবা করে আল্লাহর প্রতি ঈমান এনে খাঁটি ধর্মগ্রহণ করো।

হজরত শোয়ায়েব (আ.) এর কথাগুলো শুনে তারা তাকে ভয় দেখিয়ে বলতে লাগলেন। তোমাকে আমরা বার বার নিষেধ করেছি, এ ধরনের বাজে কথাগুলো আমাদের কাছে বলতে আসবে না, কিন্তু তুমি কিছুতেই বিরত হচ্ছো না আবার তোমাকে সাবধান করে দিলাম, এই রকম কথা বললে তোমার অকালে মৃত্যু হতে পারে। তাদের এ ধরনের কথা শুনে হজরত শোয়ায়েব (আ.) নিরাশ হয়ে পড়লেন।

এমন সময় ফেরেশতা জিব্রাইল তাশরিফ এনে বললেন, হে আল্লাহর নবী! আপনার অবাধ্য কওমের প্রতি আল্লাহ তায়ালা অচিরেই গজব নাজিল করবেন। আপনি আপনার অনুসারী ও মুমিন লোকজনদের নিয়ে এদেশ হতে অন্যদেশে চলে যান। যেহেতু আর অল্প সময় আছে।

জিব্রাইলের পরামর্শ শুনে হজরত শোয়ায়েব (আ.) তার পরিবার ও একহাজার সাতশত মুমিন বান্দা নিয়ে দেশ ত্যাগ করলেন। মাদায়েন জাতিরা নবীকে বললেন, তোমরা আমাদের ভয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছো? জবাবে হযরত শোয়ায়েব (আ.) বললেন আমরা পালাচ্ছি না বরং আল্লাহর নির্দেশেই দেশত্যাগ করছি। কেননা এদেশে আল্লাহর গজব আসবে। এই কথা শুনে তারা হাসাহাসি ও বলাবলি করতে লাগল যে, দেখ! সে এখনও আমাদের কে ফাঁকা গজবের ভয় দেখাচ্ছে ।

হজরত শোয়ায়েব (আ.) তাদের কথার কোন জবাব না দিয়ে তাদের কে নিয়ে চলে গেলেন, মাদায়েন শহর থেকে অনেক দূরবর্তী একটি দেশে। হজরত শোয়ায়েব (আ.) যেদিন দেশত্যাগ করলেন করলেন সেদিন দিনের শেষে রাত কেটে যাওয়ার পরে ভোরেই আল্লাহর গজব এসে উপস্থিত হল। দোজখ হতে আগুনের কিছু উত্তাপ ফেরেশতাগণ ঐ মাদায়েন শহরের উপরে পৌঁছে দিলেন। তাতে সারাদেশ আগুনের মত উষ্ণ হয়ে গেল। ঘর বাড়ি পথ ঘাট সব কিছু আগুনের উত্তাপে মানুষ দাঁড়ানোর অযোগ্য হয়ে পড়ল।

লোকজন ঘরে টিকতে না পেরে দৌড়ে মাঠে গেল। তখন আসমান থেকে অগ্নিবৃষ্টি আরম্ভ হল, এমন অবস্থা ফেরেশতা জিব্রাঈল এসে এত জোরে হাঁক দিলেন যে, সে হাঁকের গর্জনে লোকজন কেঁপে উঠে জ্ঞান হারিয়ে ফেলল এবং সঙ্গে সঙ্গে মারা গেল।

বর্তমানে আমাদের দেশের এবং বিদেশের মানুষেরা অবৈধ ও হারাম ব্যবসা করছে। ব্যবসায়ীরা ওজনে কম দিচ্ছে ও বহু রকমের ঠকাচ্ছে। সিন্ডিকেট আর নকল মাল দিচ্ছেন কাষ্টমারকে। বাজারে গেলে দেখা যায় মাছ ও গোস্ত ব্যবসায়ী ওজনে কম দিচ্ছে। অনেক দোকানদার মানুষদের কে নকল মাল দিচ্ছে ও মাপে কম দিচ্ছে, বহু রকমের জালিয়াতি তারা করছে, কোন জবাবদিহিতা নাই। এই সব হারাম ব্যবসায়ীরা জাহান্নামর আগুনে জ্বলবে ও তাদের অবস্থা খুব ভয়াবহ হবে।

আল্লাহ বলেন, মন্দ পরিণাম তাদের জন্য যারা মাপে কম দেয়, যারা লোকের নিকট হতে মেপে নেয়ার সময় পূর্ণ মাত্রায় গ্রহণ করে। এবং যখন তাদের জন্য মেপে অথবা ওজন করে দেয় তখন কম দেয়। তারা কি চিন্তা করেনা যে, তারা পুনরুত্থিত হবে। সেই মহান দিনে। যে দিন দাঁড়াবে সমস্ত মানুষ জগৎসমূহের রবের সম্মুখে। (সূরা আত মুত্বাফ্ফিফীন, আয়াত১-৬)

আসলে আমাদেরদের কে এই মাদায়েন জাতির ধ্বংস হওয়ার ঘটনা থেকে শিক্ষা নিতে হবে৷ আসুন আমরা আল্লাহকে ভয় করবো ও ওজনে কম দিবো না।

লেখক: আলেম, প্রাবন্ধিক

পাঠকের মতামত

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা রোহিঙ্গা সংকট সমাধান ছাড়া মিয়ানমারে শান্তি স্থায়ী হবে না

পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান ছাড়া মিয়ানমারে স্থায়ী শান্তি ও ...

ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কক্সবাজারে সংবাদ সম্মেলন

জুলাই অভ্যুত্থানের শহিদদের নিয়ে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী কর্তৃক কটাক্ষ ও ব্যাঙ্গাত্মক কন্টেন্ট বানিয়ে অপপ্রচার ...

রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান খুঁজতে ৬ দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের নিয়ে বৈঠক

মিয়ানমারের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য ছয় দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের নিয়ে বৈঠকের আয়োজন করেছে থাইল্যান্ড। ওই ...